সামরিক শক্তি বাড়িয়েই চলেছে মিয়ানমার। দেশটির সেনাবাহিনীর হাতে প্রতিনিয়তই যখন নিপীড়নের শিকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়; তখন চীন, রাশিয়াসহ বিশ্বের বেশকিছু দেশ নিয়মিত অস্ত্র সরবরাহ করছে মিয়ানমারে। এমন পরিস্থিতিতে সেখানে অস্ত্র সরবরাহ কমাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
২০১৯ সালে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন দলের এক প্রতিবেদনে মিয়ানমার যেসব দেশ থেকে সামরিক অস্ত্র কেনে সেসব দেশের নাম প্রকাশ করা হয়। ২০১৬ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নে যখন দেশটির সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জীবন বিপর্যস্ত ঠিক এমন সময়ে সেখানে সাতটি দেশ অস্ত্র সরবরাহ করেছে। তালিকার দেশগুলো হলো- চীন, উত্তর কোরিয়া, ভারত, ইসরায়েল, ফিলিপাইন, রাশিয়া ও ইউক্রেন।
সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার বিবৃতিতে দেশটির জনগণের ওপর নিপীড়ন বন্ধের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি মিয়ানমারে আর্থিক সাহায্য ও অস্ত্র সরবরাহ কমানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। ২০২১ সালে ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞায় পড়ে মিয়ানমার। একরকম বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকলেও কমেনি দেশটির সামরিক সামর্থ্য। থেমে নেই সমরাস্ত্র কেনাও।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্য মোতাবেক সামরিক শক্তিতে বিশ্বের ১৪২টি রাষ্ট্রের মধ্যে মিয়ানমার রয়েছে ৩৯ নম্বরে। আর এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অবস্থান ১৮তম। মিয়ানমার রয়েছে ৩৯ ও বাংলাদেশের অবস্থান ৪৬।
অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র থেকে সাবমেরিন, নজরদারি জন্য সর্বাধুনিক প্রযুক্তির স্পাইওয়্যার পেগাসাসের মতো সফটওয়্যার রয়েছে দেশটির সামরিক বহরে। আর প্রতিবছরই অস্ত্র কিনে সামরিক সামর্থ্য বাড়িয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার। বাড়ছে প্রতিরক্ষা বাজেটের আকার। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার সূচক বলছে, ২০২২ সালে প্রতিরক্ষা খাতে মিয়ানমারের বরাদ্দ ২২৮ কোটি মার্কিন ডলার।
আরাকান আর্মিসহ বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে জান্তা সরকারের সংঘর্ষ চলছে সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায়। জাতিগত সংখ্যালঘু এসব গেরিলা গোষ্ঠীদের দমনে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। ঘটছে সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও পুড়িয়ে ফেলার মতো ঘটনাও। জনগণের ওপর নিপীড়ন বন্ধে জান্তা সরকারকে আর্থিক সহায়তা ও অস্ত্র না দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। তবে তাতে কাজ হয়নি খুব একটা।
হালকা অস্ত্রের জন্য মিয়ানমারের নিজস্ব সমরাস্ত্র কারখানা আছে। আর ভারী অস্ত্রের পুরোটাই বিদেশ থেকে কেনে দেশটি। প্রতিবেশী দেশ চীন ও ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় দেশটির সমরাস্ত্রের বড় অংশই পূরণ করে এই দুই দেশ। আর যুদ্ধবিমান সরবরাহ করে রাশিয়া। সার্বিয়া থেকে আসে রকেট ও কামানের গোলা। জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল জানিয়েছে, ২০২১ সালে সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখলের পরও দেশটিতে অস্ত্র সরবরাহ চালিয়ে গেছে চীন, রাশিয়া ও সার্বিয়া।
পাঠকের মতামত